আত্মশুদ্ধির মাস পবিত্র মাহে রমজান । পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে। শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) ১০রমজান (রহমতের শেষ দিন)। হিজরি ১৪৪২ সালের মাহে রমজানুল মোবারকের ২য় জুম্মা মোবারক। দেখতে দেখতে এরই মধ্যে আমাদের মাঝ থেকে রমজান মাসের ৯ দিন অতিবাহিত হয়ে গেল। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অফুরন্ত রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের অমিয় বারতা নিয়ে শুভাগমন ঘটে মাহে রমজানুল মোবারকের।অপরিসীম প্রতিদান লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদত ও নেক আমলের মওসুম রমজান মাস। তারই মাঝে রমজানের জুম্মার দিনগুলি আরো বিশেষ মহিমান্বিত। এমনিতেই বলা আছে, জুম্মার দিন গরীবের হজের দিন, পবিত্র ও পূণ্যের দিন। আজ রমজানের অন্য দিনের চেয়ে সব মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে মুসল্লিরা ধর্মীয় ভাবগাম্বির্য ও আবেগ পরিপূর্ণ। পবিত্র রমজানের আজ ১০ দিনে জুমার নামাজ শেষে মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে দেশ ও জাতির কল্যাণসহ বিশ্ব মুসলিম উম্মার শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হবে।
রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব বোঝাতে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ৮৫ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করেন ‘রমজান হল এ মাস, যে মাসে আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি’। এ মাসকে বরকত-রহমত-মাগফেরাতের মাস বলা হয়। এ মাসে রয়েছে শবে কদরের মত বরকতময় রাত, যা উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং যা অন্য কোন নবীর উম্মতের ভাগ্যে জোটেনি।
শবে কদরের ফজিলত সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ ঘোষণা হল ‘লাইলাতুল কাদরি খাইরুমম মীন আলফী শাহরিন’ অর্থাৎ শবে কদরের এক রাত হাজার মাস থেকে শ্রেষ্ঠ। রমজানের গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত হল সব মাস রোজা রাখা ফরজ। প্রতিটি রোজায় মহান আল্লাহ পাক অসংখ্য মানুষকে ক্ষমা করেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতের তালিকাভুক্ত করেন। তাই এ মাসকে বরকত-রহমত-মাগফেরাতের মাস বলা হয়। এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ উম্মুক্ত করা হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করা হয় এবং শয়তানদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়। আর এ কাজগুলো রমজানের প্রতি রাতেই সংঘটিত হয় এবং শেষ রমজান পর্যন্ত এর ধারাবাহিকতা বিদ্যমান থাকে। এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হল যে, জান্নাত-জাহান্নাম আল্লাহর সৃষ্ট দুইটি বস্তু, যার দরজাগুলো প্রকৃত অর্থেই খোলা কিংবা বন্ধ করা হয়।রমজানে জুমার ফজিলত: পবিত্র মাহে রমজান অফুরন্ত ফজিলতের মাস। রমজান মাসে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজসহ তারাবি, তাহাজ্জুদ, সুন্নত ও নফল নামাজ আদায়ের গুরুত্ব অনেক বেশি। আর রমজান মাসে জুমাবার মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। ইসলামের দৃষ্টিতে দিনটি অনেক বরকতময় ও তাৎপর্যপূর্ণ। আল্লাহ এ দিনকে অন্য দিনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। পবিত্র রমজানের জুমার দিন হওয়ায় এর ফজিলত আরো অনেকগুণ বেশি। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে জুমার দিনের বহু ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।আল্লাহ তায়ালা এ দিনের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর ইবাদতের জন্য দ্রুত যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বোঝ।’ সূরা জুমুআ: ০৯
হাদিসে বলা হয়েছে, আব্দুল্লাহ্ ইবনে ইউসুফ (রা.) ও আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন জানাবত (ফরজ) গোসলের মত গোসল করে সালাতের জন্য আগমণ করে, সে যেন একটি উট কুরবানী করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমণ করে, সে যেন একটি গাভী কুরবানী করল। যে ব্যক্তি তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমণ করে, সে যেন একটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা কুরবানী করল। চতুর্থ পর্যায়ে যে আগমণ করে সে যেন একটি মুরগী কুরবানী করল। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমণ করল, সে যেন একটি ডিম কুরবানী করল। পরে ইমাম যখন খুতবা প্রদানের জন্য বের হয় তখন ফেরেশতাগণ জিকির শোনার জন্য হাজির হয়ে থাকেন।
ইসলামি শরিয়তের বিধানে জুমার দিনের মাহাত্ম্য সীমাহীন। এ দিন মানব জাতির আদি পিতা হজরত আদমের (আ.) দেহের বিভিন্ন অংশ সংযোজিত বা জমা করা হয়েছিল বলেই দিনটির নাম জুমা রাখা হয়েছে।
জুমার দিনকে আল্লাহ তায়ালা সীমাহীন বরকত দ্বারা সমৃদ্ধ করেছেন। এটি সপ্তাহের সেরা দিন। হাদিস শরিফের বর্ণনা অনুযায়ী, এ বরকতময় দিনটি আল্লাহ তায়ালা বিশেষভাবে উম্মতে মুহাম্মদিকে (সা.) দান করেছেন। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, সর্বাপেক্ষা উত্তম ও বরকতময় দিন হচ্ছে জুমার দিন। এ পবিত্র দিনে হজরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং এ দিনে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়। (মুসলিম শরিফ)এছাড়াও হাদিস শরিফে জুমার দিনকে সাপ্তাহিক ঈদের দিন বলে ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, জুমা তোমাদের পারস্পরিক দেখা সাক্ষাত ও সাপ্তাহিক ঈদের দিন। তাই এ দিনটি রোজার জন্য নির্ধারিত করা সমীচীন নয়। জুমার আগের রাত্রিটিও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, জুমার পূর্ববর্তী রাতে বনি আদমের সব আমল মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে পেশ করা হয়। (বুখারি, আহমদ)
ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
লেখক: কো- চেয়ারম্যান, হোমিও বিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।